গত কয়েক বছরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইলিশ মাছের বিক্রি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে চাঁদপুরের মাছঘাটে। চাঁদপুর মাছঘাটের রেলের জমিতে তৈরি টিনের ঘরে দেখা যায়, যুবক সজীব চন্দ্র দাস মুঠোফোনে ইলিশের অর্ডার নিচ্ছেন, আর কয়েকজন কর্মী মাছ প্যাকেট ও সংরক্ষণ করছেন। এই প্রক্রিয়া ভিডিও কলে দেখিয়ে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করছেন তাঁরা।

অনলাইনে ইলিশ বিক্রি বাড়ছে

অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম সজীব চন্দ্র দাস, যিনি তিনটি ফেসবুক পেজ—‘সজীব ইলিশের বাজার’, ‘সজীব ইলিশ’ এবং ‘মাছের মেলা’—এর মাধ্যমে মাছের অর্ডার গ্রহণ করেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ সরবরাহ করে তিনি গড়ে লাখ টাকার ব্যবসা করেন। শুধু সজীব নয়, চাঁদপুরে আরও ৪১ জন তরুণ-তরুণী অনলাইনে মাছ বিক্রির সঙ্গে যুক্ত, যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারীও আছেন। প্রতিদিন চাঁদপুর থেকে সারা দেশে প্রায় ৬০ মণ মাছ বিক্রি হয়।

ইলিশের দাম বৃদ্ধি ও এর কারণ

ইলিশের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে চাঁদপুর মাছঘাটের আড়তদার ও অনলাইন ব্যবসায়ী সাগর ব্যাপারী জানান, ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দামও বেড়েছে। সম্প্রতি তিনি ৭৫ হাজার টাকা মণ দরে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ কিনেছেন, যা প্রতি কেজিতে গড়ে ১ হাজার ৯০০ টাকা পড়েছে। অনলাইনে বিক্রি করতে গিয়ে এ দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। এতে কেজিপ্রতি গড়ে ১৭৫ টাকা দাম বেড়েছে। এছাড়া কুরিয়ার চার্জ ও প্যাকেজিং খরচও যোগ হচ্ছে।

দামের বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো জেলেদের সঙ্গে আড়তদারদের চুক্তি। মৌসুম শুরুর আগেই জেলেরা দাদন নিয়ে আড়তদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান, ফলে মৌসুমে ধরা সব মাছ আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে হয়। এই চুক্তির ফলে বাজারে সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনার সুযোগ কমে যায়, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

প্রতারণা ও প্রশাসনের ভূমিকা

ইলিশের অনলাইন বাজার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি প্রতারকদের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক সময় গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারি মানিক জমাদার জানান, তাঁরা বেশ কয়েকটি প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছেন। তবে এই সমস্যার সমাধান করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারকদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইলিশের ব্যবসায় অনলাইন মাধ্যমের ভবিষ্যৎ

প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো চাঁদপুরের মাছঘাটে ইলিশ ব্যবসার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। বাপ-দাদার আমলের প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি হাল আমলে অনলাইন মাধ্যমের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইলিশ বিক্রি করছেন, যা বাজারে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।