গত আগস্টের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একাধিক স্থানে অস্ত্র হাতে নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে ১২৬ জন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এদের মধ্যে মাত্র ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৎকালীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ অস্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছেন। আরও জানা যায়, আসিফের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর হামলা চালান।
এ ঘটনার দিন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা সড়কেও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা যায়, সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ও সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান বিপ্লব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, জামালপুর, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট ও লক্ষ্মীপুরসহ মোট ১২টি জেলায় আন্দোলন চলাকালে অস্ত্রধারীরা সক্রিয় ছিলেন। চট্টগ্রামে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্রদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। সেখানকার ১০ জন অস্ত্রধারীর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনীতে আন্দোলনের সময় ৩৩ জন অস্ত্রধারীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তবে তাঁদের মধ্যে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাঁরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রদের ওপর গুলি চালান। এতে ৯ জন নিহত হন, যার মধ্যে চারজন শিক্ষার্থী ছিলেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা সরাসরি গুলি চালানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আরও অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং তাঁদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকার বাইরে ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, জামালপুর, এবং অন্যান্য জেলাতেও অনেক অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা গেলেও তাঁদের বেশিরভাগই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের জানান, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ছাত্র-জনতা আশা করে যে, প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করা হবে এবং যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবি তুলেছেন।
https://slotbet.online/