বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রতি বছর ৬৬ কোটি টাকার বেশি লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৮ সালের মে মাসে উৎক্ষেপিত এই স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, যা তার ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনে বাধা দিচ্ছে।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল সংযোগ ও যোগাযোগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তবে, স্যাটেলাইটটির বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে বছরে বিশাল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যাটেলাইটের প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে যে আশা করা হয়েছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। স্যাটেলাইটের পরিষেবা এখনও লক্ষ্য করা যায়নি যে পরিমাণে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে স্যাটেলাইটের সেবা বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
যদিও সরকারের পরিকল্পনা ছিল এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে পরিষেবা বিক্রি করে লাভ অর্জনের, বাস্তবতা হলো বিদেশি ক্লায়েন্টদের থেকে প্রত্যাশিত লাভ প্রাপ্তি সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, স্যাটেলাইটের পরিচালনা ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার গবেষণা এবং প্রযোজ্য কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। এর ফলে, স্যাটেলাইটটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।
একটি সরকারের কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং বাজারে তার প্রতিস্থাপন সম্পর্কিত কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্যাটেলাইটের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালানো হলেও, সেটি কাঙ্খিত মাত্রায় সম্প্রসারণ পায়নি। এর ফলে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি এবং লোকসান বাড়ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা স্যাটেলাইটের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় যে সমস্যাগুলি রয়েছে তা চিহ্নিত করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের এই বিপর্যয় সরকারের বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্যাটেলাইটের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকরী কৌশল প্রণয়ন করে এই লোকসান কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের ব্যবহারের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সফলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।