এক যুগের অপেক্ষার পর যশোর চেম্বারের নির্বাচনের তফসিল প্রকাশিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোট। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনের এই ঘোষণায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এত দিন যশোর চেম্বারের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধের কারণে নির্বাচন বারবার পিছিয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীরা বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করে আসছিলেন, যা নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। নতুন তফসিল ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে, যদিও আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তাদের অনেকেই গোপনে চলে গেছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে ১৯ অক্টোবর থেকে এবং জমা দিতে হবে ২৬ অক্টোবর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ নভেম্বর, এরপর ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোট।
নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, ৭ সেপ্টেম্বর আপিল ও নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যশোর চেম্বারের প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম শাহীন স্বাক্ষরিত এক পত্রে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদারকে আপিল বোর্ডের আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেনকে নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘ এক দশক ধরে যশোর চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর ফলে, চেম্বারের কার্যক্রম প্রশাসক দিয়েই পরিচালিত হচ্ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তাদের হস্তক্ষেপের কারণে নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে, যশোর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান মন্তব্য করেছেন, “আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রভাবে এত দিন যশোর চেম্বার অভিভাবকশূন্য ছিল। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা ফিরে এসেছে।”
অপরদিকে, যশোর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
এছাড়া, ২৭ আগস্ট যশোর চেম্বারের প্রশাসকের মেয়াদ আরও চার মাস বাড়ানো হয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচনের আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আগেই চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক প্রভাব ও আদালতে মামলা থাকার কারণে এক যুগ ধরে যশোর চেম্বারের নির্বাচন হয়নি। ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল চেম্বারের নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়ী হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন কখনও সম্পন্ন হয়নি। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয় এবং তারপর থেকে নির্বাচন হয়নি।