• শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের অর্থনীতি: চ্যালেঞ্জের মুখে তৈরি পোশাকশিল্প ও নতুন বাস্তবতা

Reporter Name / ৫১ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিশ্বের অন্যতম প্রধান পোশাক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ বেশ পরিচিত। বিশ্বের অনেক বড় ব্র্যান্ডের পোশাক বাংলাদেশে তৈরি হয়, যা সারা বিশ্বের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ শিল্পের সফলতার কারণে, বাংলাদেশ গত তিন দশকে এক সময়ের দরিদ্র দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

তবে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ দেখা দিয়েছে, যা শিল্পের উৎপাদন এবং রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত চারটি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এবং বিক্ষোভের কারণে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নতুন বাজারের খোঁজ শুরু করেছে।

বর্তমানে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরও উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার আশপাশের অন্তত ৬০টি কারখানা শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, যা শিল্পের উৎপাদনকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতা ব্র্যান্ডগুলোর আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা হয়তো ভাববে, বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা ঠিক হবে কি না।

এছাড়া, দেশের অর্থনীতি ইতিমধ্যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কোভিড-১৯ মহামারীসহ অন্যান্য কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে এবং বেচাকেনাও কমেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণ অবহেলা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে দেশের আর্থিক খাতে ডাকাতি হয়েছে। তাঁর মতে, এই সমস্যার সমাধান করা এখন তাঁর প্রধান দায়িত্ব।

আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, দেশের শ্রমবাজার। তৈরি পোশাক খাতে লাখ লাখ কর্মসংস্থান হলেও শ্রমিকদের বেতন খুবই কম। শ্রমিকরা মাস শেষে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, যা সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল।

অনেক তরুণ কর্মসংস্থান সমস্যায় ভুগছেন এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ তারা যেসব ডিগ্রি অর্জন করছেন, সেই অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।

তবে, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারের কাছে এখন একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চাহিদার সংকট এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এসব চ্যালেঞ্জে যোগ করেছে।

আশা করা হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত, তার নেতৃত্বে তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/