বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বুধবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দীর্ঘ আট মাস পর অনুষ্ঠিত এই সভার মাধ্যমে নতুন গভর্নর তার পরিকল্পনাগুলি তুলে ধরেন। সভায় মূলত সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঋণখেলাপি সমস্যা নিয়েও কথা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে ১১টি ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছেন না। এসব ব্যাংককে সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা প্রদান করা হবে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বড় পরিমাণ অর্থের প্রিন্টিংয়ের পরিবর্তে সীমিত পরিমাণে সহায়তা দেওয়া হবে যাতে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম বৃদ্ধি না পায়।
এছাড়া, সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এগুলোর নিরীক্ষা করা হবে এবং ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইসলামী ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক টাকা হারানোর বিষয়টি উল্লেখ করে গভর্নর বলেছেন, এসব ব্যাংক মেরামত করতে এক-দুই বছর সময় লাগবে।
বিশেষ করে, সরকার বড় ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের বিদেশে থাকা সম্পত্তি জব্দের উদ্যোগ নিয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একজন ব্যক্তি ৫০০-৬০০ বাড়ির মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, যা পাচার হওয়া অর্থের বড় অংশের প্রমাণ।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের উন্নয়নের জন্য তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এসব টাস্কফোর্স খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, আইনি কাঠামো জোরদার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করতে কাজ করবে। এছাড়া, সরকারি ব্যাংকগুলোর বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়টি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সবশেষে, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নিশ্চিত করেছেন যে, ব্যাংকিং খাতের এই সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং আমানতকারীদের পাশে থাকবেন। তবে, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।