পরবর্তীতে সুপ্রিয়ার পরিবার কলকাতায় চলে আসে। সেই সময় উত্তমের ফ্লপ সিনেমাগুলোর খবর সুপ্রিয়ার কানে পৌঁছায় এবং তিনি তাঁর সিনেমাগুলো দেখতে শুরু করেন। ‘বসু পরিবার’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে প্রথমবারের মতো তাঁদের পরিচয় ঘটে।
উত্তম কুমার বিয়ে করেন গৌরী চট্টোপাধ্যায়কে এবং সুপ্রিয়া দেবী ঘর বাঁধেন বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জির সঙ্গে। কিন্তু তাদের কেউই বিয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ১৯৫৪ সালে সুপ্রিয়া ও বিশ্বজিতের বিচ্ছেদ ঘটে। উত্তমও সাংসারিক সমস্যার কারণে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ছিলেন।
সুপ্রিয়া দেবী প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করেন ‘আম্রপালি’ সিনেমার মাধ্যমে, যেখানে তাঁকে বিশেষভাবে কাস্ট করেছিলেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তম কুমারের শোনায় এসে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা তাঁকে স্পর্শ করে এবং এরপর ‘উত্তর মেঘ’, ‘সোনার হরিণ’, ‘শুন বরনারী’ ছবিগুলোর জন্য সুপ্রিয়াকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়।
উত্তম কুমার তাঁর আত্মজীবনী 'আমার আমি'তে উল্লেখ করেছেন, সুপ্রিয়া দেবীর সেবাযত্নের মাধ্যমে তিনি কিভাবে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট কাটিয়ে উঠছিলেন। সুপ্রিয়া দেবীর আশ্রয় তাঁকে শান্তির সন্ধান দিয়েছিল, তবে উত্তম কুমার স্পষ্ট করে বলেন যে, তিনি কখনোই সুপ্রিয়া দেবীকে ঠকাতে চাননি।
১৯৬২ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিয়া দেবী ও উত্তম কুমার ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও গৌরী দেবীর সঙ্গে উত্তমের আইনি বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি, তাই সেই বিয়ের আইনগত মান্যতা ছিল না।
এমন বিয়ের কারণে প্রচুর সমালোচনা হয়। উত্তম কুমারের বন্ধু ও পরিচালক শ্যামল মিত্র উত্তমের পাশে গৌরী দেবীকে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং সুপ্রিয়া দেবীকে তাঁর সঙ্গে মানতে পারছিলেন না। তিনি উত্তমকে বলেন, “ভবানীপুরে ফিরে না গেলে ছবির শুটিং বন্ধ।” উত্তম উত্তরে বলেন, “এখনই বেণুকে ছেড়ে যেতে পারব না, একটু সময় দাও।”
উত্তম গৌরীকে ডিভোর্স দেননি, তাই সুপ্রিয়া দেবীর সাথে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে পারছিলেন না। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু উত্তম ও সুপ্রিয়া তার ধার ধারে না। সুপ্রিয়া দেবী ১৭ বছর উত্তমের সাথে সংসার করেছেন এবং উত্তমের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়েছেন।
আজও, উত্তম কুমার ও সুপ্রিয়া দেবীর সম্পর্কের এই গভীর কাহিনী চলচ্চিত্র ইতিহাসের একটি অমর অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।