• শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

জিন-জিরা পরিবারেও সংস্কার আনতে পারে

Reporter Name / ৫০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তার চরম সংকটের কারণে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। এই চরম অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে এবং সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

এই পরিস্থিতি সামলাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ডাকাতি প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় রাতের সময় পাহারা দেন। আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিভিন্ন সড়কে নকশা আঁকেন এবং দেয়ালে গ্রাফিতি করেন। স্লোগান এবং নানা বাক্য দিয়ে দেয়ালের পর দেয়াল ভরে দেন। বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করেন। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষ। তাঁদের এই উদারতার মাধ্যমে সমাজের জন্য একটি নতুন আশা উদ্রেক হয়।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জে একটি ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ে ঘুষের টাকাসহ এক অফিস সহকারীকে আটক করার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা ওই কার্যালয়ে গিয়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষসহ অফিস সহকারীকে হাতে নাতে ধরেন। এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের তৎপরতা ভবিষ্যতেও বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রতিটি শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল থাকতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা সংকটের খবর পেলেই শিক্ষার্থীদের এগিয়ে এসে তা সমাধান করতে হবে। তবে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই; ‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই বৈধতা পাবে না।

সামাজিক পরিবেশে একশ্রেণির তরুণ-যুবক শিক্ষার্থীদের তৎপরতা কলুষিত করার চেষ্টা করছে। কিছু চক্র শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি করছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে তরুণ-যুবকদের একটি চক্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সরকার পতনের পর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেও খুনের ঘটনা ঘটেছে। আদালতে আসামিদের ওপর হামলা, কিল-ঘুষি ও লাথি মারার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের জন্য শিক্ষার্থীদেরই আওয়াজ তুলতে হবে এবং আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছেন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিকভাবে চলছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এখন নিজ নিজ পরিবার সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। রাষ্ট্র সংস্কারের পর পরিবারও সংস্কার করা জরুরি, কারণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত লোকজন কেউ না কেউ পরিবারের সদস্য।

গত পনেরো বছর ধরে দেশে নৈরাজ্য, লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। এ জন্য আমাদের পরিবারগুলোকেও সংস্কার করতে হবে। সন্তানদের উচিত বাবামায়ের আয়ের উৎস এবং জীবনযাপনের খরচের সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখা। অতিরিক্ত উপার্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে হবে এবং বাবামায়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের কিছু বিলাসবহুল জীবন এবং পারিবারিক সুবিধার পরিবর্তন ঘটতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতের আলোর পথের জন্য এসব পরিবর্তন ঘটানো আবশ্যক। পরিবার এবং স্বজনদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। একদিনের পরিশ্রম এবং ত্যাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রে সুশাসন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ঘুষ ও দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

অধিকার-স্বাধীনতা হরণ করে, মানুষের প্রাণ নিয়ে উন্নয়নের যে মডেল দাঁড় করানো হয়েছিল, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের দেশে তা উল্টো হয়েছে। আমরা একটি সুন্দর, সুশাসিত এবং উন্নত বাংলাদেশ চাই, যেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিরাপত্তা ও সৌহার্দ্য থাকবে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/