মেনোপজ, বা রজঃনিবৃত্তি, ৪৫ বছর বয়স বা তার পরবর্তী বয়সে নারীদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে ঘটে। এটি নারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক পর্যায়, তবে এই সময় শরীরের হরমোন পরিবর্তনের কারণে অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। বিশেষ করে, ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতির কারণে হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যা বা অস্টিওপোরোসিস একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্বজুড়ে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে, মেনোপজ পরবর্তী হাড় ক্ষয় সমস্যা ক্রমবর্ধমান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কারণ হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙে যায়। মেরুদণ্ড, ঘাড়-কোমর, নিতম্ব এবং বাহুর হাড় ভাঙার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির কিছু কারণ রয়েছে:
- ধূমপান ও মদ্যপান
- দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন
- স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন
- অপুষ্টি
- পরিবারের পূর্বপুরুষদের অস্টিওপোরোটিক ফ্র্যাকচার ইতিহাস
- দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, বাতরোগ
- ৪০ বছর বয়সের আগে মেনোপজ হওয়া
ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের জন্য সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাড় ক্ষয়ের কারণে হাড় ভাঙলে বয়স্কদের মধ্যে উচ্চতা কমে যাওয়া বা কুঁজো হয়ে পড়া, ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাড় ভাঙার আগ পর্যন্ত এ রোগ কোনো লক্ষণ ছাড়াই চলতে থাকে।
৬৫ বছর বয়স বা এর বেশি বয়সী নারীদের এবং যারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হাড় ক্ষয়ের চিকিৎসায় করণীয়:
১. ওষুধ:
- উপযুক্ত ওষুধ নির্বাচন এবং সেবনের নিয়ম নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- জীবনযাত্রা:
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
- পরিমিত ক্যাফেইন গ্রহণ করুন।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন শরীরচর্চা করুন।
- পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন, যা খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব।
মেনোপজ নারীদের জীবনের একটি অবধারিত অধ্যায়, তাই এই সময়ের সমস্যাগুলির প্রতি সচেতন হওয়া ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভীতি না নিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।