বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে নির্বিচার গুলি করে অনেককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় মামলা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে, যা মামলার সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে বাধা সৃষ্টি করছে। আইনবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে।
অতীতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষকে গায়েবি মামলায় হয়রানির ঘটনা ছিল, যেখানে পুলিশ বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাদী ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রায় ৭৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছাত্র, নারী, শিশু, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
নিহতদের পরিবারের করা মামলাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে আসামি করা হচ্ছে এবং স্থানীয় বিরোধের কারণে অনেকের নাম যুক্ত করা হচ্ছে। আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যা মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মামলায় ‘হুকুমদাতা-নির্দেশদাতা’ উল্লেখ করা হচ্ছে, যা আদালতে মামলার স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
মামলার ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে যে, অনেক আসামির নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে 'অজ্ঞাতনামা' এবং এ ধরনের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩৯৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় অনেক সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামও রয়েছে। এদিকে, কিছু মামলায় বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া হচ্ছে যা ব্যক্তিগত শত্রুতা অথবা রাজনৈতিক প্রতিশোধের ইঙ্গিত বহন করছে। তিনি মামলার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারের পদত্যাগের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১০৫টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৭টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন মন্তব্য করেছেন, ঢালাওভাবে মামলা দেওয়ার কারণে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারেন এবং ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেতে বাধাগ্রস্ত হতে পারেন।
এছাড়া, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ওপর আদালত চত্বরে হামলা বা মারধরের মতো ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। সাবেক আইনমন্ত্রী ও অন্যান্য রাজনীতিবিদদের ওপর হামলার ঘটনা আইনবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মামলার সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সরকারের আদালতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বর্তমানে, মামলার সঠিক তদন্ত ও আদালতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভুক্তভোগীরা প্রকৃত ন্যায়বিচার পেতে পারে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বজায় থাকে।