সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সাধারণত জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত চলমান থাকে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুমকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কার্যকর করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে এই নিয়মটি পালন করা হচ্ছে, এবং ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবন আবার উন্মুক্ত করা হয়।
আজ সকালে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের সামনে দেখা যায়, বনজীবী জেলেদের নৌকাগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) বিতরণ করা হচ্ছে। কিছু জেলে পাস নিতে বন বিভাগের কার্যালয়ের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন, আবার কেউ ইতিমধ্যেই অনুমতিপত্র নিয়ে মাছ ধরার জন্য রওনা হয়েছেন।
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের সামনে নৌকার পাটাতন মেরামত করতে দেখা যায় জেলে আবদুল মান্নানকে। তিনি বলেন, “প্রজনন মৌসুমে মাছ ও কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হলেও, কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিষ ছিটিয়ে শিকার করেন, তাই মাছ-কাঁকড়া কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না।” অপর জেলে আসাদুল ইসলাম জানান, “তিন মাস সরকারি সহায়তা ছাড়াই কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন মাছ ধরতে পারলে পরিস্থিতি একটু ভালো হবে।”
বনজীবীরা জানান, তাদের প্রত্যেকটি নৌকায় দুই থেকে তিনজন জেলে থাকেন এবং তারা প্রথমে ছয় দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে মাছ ও কাঁকড়া সংগ্রহ করবেন। তারপর আবার ফিরে আসবেন। এইভাবে বছরে ৯ মাস তারা সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ করবেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪৫০টিরও বেশি নদী-খাল রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি খাল ও ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বাকি নদী-খাল ও জলাভূমিতে পারমিটধারী জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য ১২ হাজার নৌকা ও ট্রলারকে বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল এখানে সম্পদ আহরণ করেন। এছাড়া, সুন্দরবনের সাতটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রতিবছর আড়াই লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।
আজ সকালে কয়রার উপজেলার সুন্দরবন ভ্রমণের ট্রলারমালিক রিপন হোসেন জানান, “আজ সকালে ৩৫ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের উদ্দেশে কয়েকটি ট্রলার ছেড়ে গেছে। পর্যটন মৌসুম এখনো শুরু হয়নি, তবে মানুষের সুন্দরবন ভ্রমণের আগ্রহ সব সময়ই থাকে।”
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, “আমাদের স্টেশনের আওতায় ৯৪৩টি নৌকার অনুমতিপত্র রয়েছে। সকাল থেকে পাঁচ শতাধিক জেলে পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় বনের নদী-খালে মাছ ও বন্য প্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে।”
সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান জানান, “সব বনজীবীকে বনের আইন মেনে চলতে হবে। বনরক্ষীদের টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”