• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৭:১০ অপরাহ্ন

বিএনপি নেতারা পুলিশকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের এনে, আসামি তালিকা তৈরি করেছেন

Reporter Name / ৪৯ Time View
Update : বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় যে হত্যা মামলা হয়েছে, তাতে আসামি তালিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ করেছেন যে, তাদের নাম মামলা সংক্রান্ত কাগজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের ঘটনার সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। অভিযোগ রয়েছে যে, বিএনপির নেতারা পুলিশের সাথে মিলেমিশে এসব নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং ঘটনার বিবরণ পরিবর্তন করেছেন।

এই মামলায় হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিনকে প্রধান আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা হায়দারুজ্জামান খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, মন্দরী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক, যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ নেওয়াজ অন্তর্ভুক্ত আছেন।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, মামলার আগের দিন বিএনপি নেতারা তাঁদের জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান। সেখানে বসে মামলার আসামি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের বলা হয়নি কারা আসামি এবং পুলিশ তাদের ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

৫ আগস্টের ঘটনায়, বানিয়াচংয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ওইদিন দুপুরে এলাকার এল আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অনেক মানুষ জমায়েত হন এবং একটি মিছিল নিয়ে থানার দিকে রওনা হন। ঈদগাহ এলাকায় পৌঁছানোর পর পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। এসময়, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে, পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, এবং গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জনসহ মোট ৯ জন নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে শিশু হাসান মিয়ার (১২) বাবা মো. ছানু মিয়া ২২ আগস্ট মামলাটি করেন। এজাহারে পুলিশের গুলি ছোড়ার উল্লেখ নেই, বরং আওয়ামী লীগ নেতারা গুলি ছোড়েছেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় ৭১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আজিজুর রহমানের প্রবাসী ছেলে রুহুল আমিনকে, যিনি ইতালিতে বসবাস করছেন। তাঁর বাবা জানান, রুহুল আমিন কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত নয় এবং তিনি কেন আসামি হয়েছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মামলার ১৬ নম্বর আসামি ফুয়াদ উল্লা খান, যিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ঘটনার দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন। এছাড়া ১৩১ নম্বর আসামি দৈনিক সমকালের বানিয়াচং উপজেলা প্রতিনিধি রায়হান উদ্দিনসহ আরও চার গণমাধ্যমকর্মী মামলায় আসামি হয়েছেন। তাদের বক্তব্য, তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নন এবং মামলায় কেন তাদের নাম এসেছে তা নিয়ে চিন্তিত।

বানিয়াচংয়ের শিক্ষক আবুল মনসুর তুহিন এবং ফজলে উল্লাহ খান মামলায় আসামি হয়েছেন, যদিও তারা সংঘর্ষের ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।

বিএনপি নেতাদের দাবি, মামলা সাজানো হয়েছিল, যার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মামলার সকল আসামির নাম একত্রিত করার জন্য এভাবে করা হয়েছে।

৫ আগস্টের ঘটনায় পরবর্তী সময়ে কয়েক হাজার মানুষ থানার সামনে জমায়েত হন এবং থানায় অগ্নিসংযোগ করেন। সেনাবাহিনীর গাড়ি থেকে থানার উপপরিদর্শক সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এভাবে মামলার এজাহারে অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে এবং এতে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/