• শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ন

দুর্গত এলাকায় চিকিৎসাসেবার অভাব

Reporter Name / ৪৮ Time View
Update : বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

ফেনী জেলার লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে আশ্রিত মো. আলমগীরের তিন সন্তান দুই দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছে। পানিতে ভিজে তাদের এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। সাত দিন আগে আলমগীর এবং তার পরিবার বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রের চারপাশে বুকসমান পানি জমে রয়েছে এবং কোথাও হাঁটুপানি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আলমগীর তাদের চিকিৎসার জন্য বাইরে বের হতে পারছেন না। চল্লিশোর্ধ্ব এই অটোরিকশাচালক এক পা হারিয়েছেন, তাই দূরে গিয়ে ওষুধ আনা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

আলমগীর জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে আরও ১০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এবং সেখানে ৫-৬টি শিশু রয়েছে। সবাই অসুস্থ হলেও কোনো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। আশ্রয়কেন্দ্রের কমিউনিটি হাসপাতালও পানিতে ডুবে গেছে এবং ওষুধপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।

ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, পানি বেশি হওয়ায় গ্রামে গ্রামে চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ছয় উপজেলায় জরুরি চিকিৎসা দলের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বিশেষজ্ঞ দল ফেনীতে এসেছে। পানি নেমে গেলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে সেবা প্রদান করা হবে।

ফেনী সদর হাসপাতাল ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সেবা চলছে, তবে গ্রামে কোনো চিকিৎসক দলের পৌঁছানোর খবর পাওয়া যায়নি। ফেনী সদরের ফাজিলপুর ও লেমুয়া এলাকার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি গুরুতর। সেখানে শিশুদের মধ্যে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বেড়েছে।

ফাজিলপুর ইউনিয়নের পুর্বালী গ্রামের একটি মাদ্রাসায় আশ্রিত ফারজানা আক্তার জানান, তার ১৩ মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদ আপ্পান দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছে এবং সাড়ে চার বছরের মেয়ে সাদিয়া আক্তারের সর্দি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রের চারপাশে বুকসমান পানি থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ নেই।

উত্তর টংগিরপাড় হাজী বাড়ি মসজিদের বাসিন্দা তানিয়া আক্তার জানান, তার চার বছরের শিশুও জ্বর ও সর্দিতে ভুগছে। গ্রামের রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে, তাই কোনো স্বাস্থ্যকর্মী গ্রামে পৌঁছাতে পারেননি।

ফেনীর তুলাবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ১৫৫ পরিবারের কয়েকশ মানুষ আশ্রিত রয়েছে। এখানে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা দাশ দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছে এবং তার জ্বর ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছেছে। পানি জমে থাকার কারণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলায়—ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—পানি কিছুটা কমেছে, তবে এখনও হাঁটুপানি রয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

গত পাঁচ দিনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং সশস্ত্র বাহিনী হেলিকপ্টারে ৩৮ হাজার খাবার প্যাকেট বিতরণ করেছে। তবুও, দুর্গম গ্রামগুলোতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। লালপোল, বড় বাজার, কসকা, ফাজিলপুর, মুহুরীগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় ত্রাণের অভাব রয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল বাছিম জানিয়েছেন, মহাসড়ক লাগোয়া গ্রামে ত্রাণ এসেছে, তবে ভেতরের লস্করহাটের দিকে ত্রাণ পৌঁছায়নি।

জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীন আক্তার বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। যদিও স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণ সহযোগিতা করছেন, সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।

বন্যার পানি কমতে দেরি হচ্ছে এবং ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার হাসান জানিয়েছেন, নদী ও খালগুলো পূর্ণ হয়ে থাকার কারণে পানি নামতে দেরি হচ্ছে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/