• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

প্রবাসীরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে মুখিয়ে আছেন

Reporter Name / ৫১ Time View
Update : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশের সড়কগুলোয় শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, শহরের বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা পরিষ্কারের দৃশ্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তার হৃদয়স্পর্শী চিত্র বিশ্বব্যাপী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই ছবিগুলি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপগুলোতে বারবার আলোচিত হচ্ছে। বহু প্রবাসী বর্তমান সংকটময় সময়ে দেশের জন্য নিজেদের সময়, মেধা, ও সম্পদকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজছেন।

বর্তমানে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে মূলত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অবদান রাখছেন। তবে, অনেক প্রবাসী যারা দেশি-বিদেশি ক্ষেত্রে সর্বাধিক মেধাবী ও ধনবান, তারা রেমিট্যান্সের চেয়েও গভীরতর অবদান রাখার সুযোগ পেতে পারেন। তারা উন্নতমানের কর্মসংস্থানের প্রকল্প, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

এক সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং স্যার ফজলে হাসান আবেদের মতো ব্যক্তিরা প্রবাসী জীবনের পেছনে ফেলে দেশে ফিরে এসে আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী ছিলেন। তবে, গত এক দশক ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতি প্রতিভাবান প্রবাসীদের দেশে ফিরে অবদান রাখার জন্য অনুকূল ছিল না।

২০০৬-০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক দক্ষ প্রবাসী দেশে ফিরে এসে দেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য কর্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংস্কারের কিছু প্রাথমিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মূলধারার রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার ফলে অনেক সংস্কার স্থগিত হয়ে যায়। এর ফলে, প্রবাসীদের দেশে ফিরে এসে অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই থেকে যায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রবাসীরা নতুনভাবে দেশে অবদান রাখার সুযোগ খুঁজছেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করছেন কিভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর বাইরে গিয়ে দেশের উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

বিশেষ করে, সিলিকন ভ্যালির বহুজাতিক কোম্পানির প্রবাসী বাংলাদেশি নেতারা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা, এবং বাংলাদেশের বেসরকারি সেমিকন্ডাক্টর মাইক্রোইলেকট্রনিকস শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পপতিরা সম্প্রতি দেশে মাইক্রোইলেকট্রনিকস শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা করেছেন। মার্কিন সরকারের ২৮০ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা ও উৎপাদনে বিনিয়োগের উদাহরণ তুলে ধরে, বাংলাদেশের জন্য এই খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে।

চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং ভারতের প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের দেশে ফিরে এসে অবদান রাখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশেও প্রতিফলিত হতে পারে। আমাদের প্রবাসীরা যদি গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে দেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

তবে, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রবাসীদের বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের মতো, বাংলাদেশের প্রবাসীরা বন্ড ইস্যু করে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন। ভারত ২০০০ সালে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে, আর শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি কয়েক বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন বন্ড ইস্যু করেছে।

বাংলাদেশের প্রবাসী জনগণ তাদের মেধা, অর্থ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

 


More News Of This Category
https://slotbet.online/