ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আগস্টের প্রথম দিকে সাধারণত ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তবে এবার তিন দিনের মধ্যে ওই পরিমাণের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও, বিশেষ করে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদী, খাল ও জলাশয়গুলি পূর্ণ হয়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কুমিল্লার গোমতী নদীর উজানে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো বাঁধ রয়েছে। তবে, এই বাঁধের অবস্থাও বন্যার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কাপ্তাই বাঁধের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও, বৃহত্তর এলাকায় বন্যার পানি আটকে রাখার কোনো বড় অবকাঠামো না থাকায় পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশন দুই দেশের মধ্যে নদীর পানি বণ্টন এবং বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু, নদীর পানি বৃদ্ধির তথ্য সময়মতো পাওয়া নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে। সিলেটের উজানের নদী-নদীগুলোর তথ্য পাওয়া গেলেও, ফেনী-কুমিল্লার উজানে পানির বৃদ্ধির অন্যান্য তথ্য সীমিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের নদী-পানির তথ্য বিনিময় করলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একমত হওয়া সত্ত্বেও, রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্মতির অভাবে এ প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে না।
ভারতের রাজ্যভিত্তিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সেচ প্রকল্পের কারণে উজানে পানির প্রবাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বাংলাদেশের পানিসম্পদ উপদেষ্টা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং আরও তথ্য পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
অতএব, ফেনী ও কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুই দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নদীর পানি ও বন্যার পূর্বাভাসের তথ্য আদান-প্রদান এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সম্ভব হতে পারে।