বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত, ছিল বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক সংগ্রাম। এই যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান দুটি ভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ছিল: পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)। এ দুটি অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ও অর্থনৈতিক পার্থক্য ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের পক্ষপাতমূলক নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বঞ্চিত হতে থাকেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করলে, এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ, ব্যাপকভাবে আন্দোলন করে। এই আন্দোলনে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেক শহীদ হন, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল। ছয় দফা আন্দোলন পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করলেও পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব এই ফলাফল মেনে নেয়নি এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়।
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে “অপারেশন সার্চলাইট” নামক একটি নির্মম অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।
২৫ মার্চের পরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা কৌশলে যুদ্ধ চালায়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় মুক্তিবাহিনী ও মুজিবনগর সরকার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ভারত সামরিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করে।
৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুধু একটি রাষ্ট্রের জন্মই দেয়নি, বরং এটি বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, এবং ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এই যুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের জন্য গৌরব ও ত্যাগের প্রতীক, যা আজও দেশের প্রতিটি প্রজন্মের মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা যোগায়।
https://slotbet.online/