রাজধানীর আফতাবনগরের জহুরুল ইসলাম সিটির তোরণের পাশে এক নতুন দৃশ্য। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সংলগ্ন এলাকার দেয়ালে আঁকা হচ্ছে দ্রোহের পদ্য। একদল ছাত্র–ছাত্রী কালি আর তুলির সাহায্যে প্রকাশ করছে তাদের ক্ষোভ ও আকাঙ্ক্ষা।
দেয়ালে লিখিত কথাগুলো স্পষ্ট—”শোনো মহাজন, আমি নইতো একজন… আমরা অনেক জন।” এই দলটি এক নয়, বরং বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাস্তার দেয়ালে দ্রোহের বার্তা লেখছে। একেবারে স্বাগত জানিয়ে তারা আমাকে তাদের কাজের অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আফরিদা তাসনিন এশা, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, জানিয়েছে যে এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আহ্বান। কয়েকটি কলেজও এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জড়িত। আমার কনিষ্ঠ কন্যা, যিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রা, তারও আগ্রহ বেড়ে যায় এবং সে এই উদ্যোগে অংশ নিতে আগ্রহী হয়।
এশা তার সহপাঠীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো রিয়াসাত মাহমুদ এবং আকিব আফসার, যাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে তাদের সংগ্রামী অতীত। এই চিত্রায়ণে দেখা যাচ্ছে, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য ছাত্ররা একত্রিত হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ইম্পেরিয়াল কলেজের ছাত্র–ছাত্রী মৌ এবং শোভন, এবং আবুজর গিফারি কলেজের হাবিবা ও সুপ্রভা, সবাই তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করছে। তারা রাস্তার দেয়ালে আঁকছে, সমাজের সকল বিভাজন মুছে ফেলার প্রয়াসে।
শিল্পীর ভাবমূর্তি সাধারণত কোমল হলেও, দেয়ালচিত্রের শিল্পীরা যেন জলদস্যুদের মতো তাদের শিল্পের এলাকা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা তাদের চিত্রকর্মের জায়গা শক্তভাবে ধরে রাখে। এশা এবং তার সহকর্মীরা রাস্তার সংস্কৃতি রক্ষায় যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
গতকাল আফতাবনগরের দুই নম্বর রোডে দেখা গেল, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তকিউদ্দীন আহমেদ চয়ন এবং রুমাইয়া হোসেন সমাজের বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য দেয়ালচিত্র আঁকছে। তাদের লক্ষ্য সমাজের সকল বিভাজন দূর করা।
বিভিন্ন গ্রুপের ছাত্রদের এই একত্রিত প্রচেষ্টা সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যবাদের প্রতি তাদের গভীর বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করছে। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে দেখাচ্ছে, শুধু ভাষা ও কালি নয়, বরং প্রতিটি ছবির মাধ্যমে তারা সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার করছে।